তাড়াতাড়ি ধনী হওয়ার সহজ উপায় - কোকা পন্ডিত

Header Ads

তাড়াতাড়ি ধনী হওয়ার সহজ উপায়



ঠাৎ করে ধনী হওয়ার একাধিক সহজ উপায় কমবেশি সব দেশেই রয়েছে। সবচাইতে সহজ উপায় হলো লটারীর টিকেট কেনা। কিন্তু এতে সব ক্রেতাই যে হঠাৎ করে ধনী হবেন, সে ধারণা সঠিক নয়। এক লাখ ব্যক্তি যদি ক্রেতা হন তাহলে সর্বোচ্চ তিন জন হয়ত লটারীর টিকেট জয়ী হবেন এবং বিভিন্ন নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ পাবেন। বাকিদের বিনিয়োগে কোন লাভ হবে না। এদের মধ্যে যে সব ব্যক্তি বার বার লটারীর টিকেট ক্রয় করবেন অথচ জয়ী হতে ব্যর্থ হবেন তাঁদের ক্ষতি হবে সবচাইতে বেশি। সাধারণত বেসরকারী সংস্থা কোন জনহিতকর কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার লক্ষ্যে লটারীকেই ব্যবহার করে থাকেন। দু’একটা ক্ষেত্রে লটারীতে প্রতারণাও হতে পারে। বেসরকারী বিনিয়োগে মূলধন আহরণের একটি উপায় হচ্ছে শেয়ারবাজার। বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা এ বাজারে শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেন। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহণ করেই তাঁরা শেয়ারবাজারে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করেন। এখানেও কিছু ক্ষেত্রে লটারী প্রথা রয়েছে। লটারী মাধ্যম ব্যবহার করা হয় তখন যখন পূর্বঘোষিত নির্দিষ্ট পরিমাণ শেয়ারের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা হয় অধিকতর। তাত্ত্বিক অর্থে সাধারণ শেয়ার বিনিয়োগকারী এ ব্যবস্থার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অংশীদারিত্ব লাভ করেন। বাস্তবে অংশীদারিত্ব লাভ করা মুখ্য উদ্দেশ্য হয় না। মুখ্য উদ্দেশ্য হয় অধিকহারে লভ্যাংশ প্রাপ্তির আশা।
শেয়ারবাজারের সাধারণ ক্রেতা যাঁরা শেয়ার বিনিময় কেন্দ্রের বাইরে প্রতিদিন শেয়ার কেনা-বেচা করেন তাঁদের সীমাহীন দুর্ভোগ সইতে হয়। কারণ হঠাৎ করে শেয়ারবাজারে ধস নামলে তাদের আর্থিক ক্ষতি হয়। ১৯৯৬ সালের পর শেয়ারবাজারে ধসের ঘটনা ঘটে ২০১১ সালে। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে সিকিউরিটিজ এক্সেচঞ্জ কমিশন। এ কমিশনকে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান বলা হলেও বাস্তবে এটা কত স্বাধীন তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ রয়েছে। সরকারী বা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মাত্রা কত, তা নির্ণয় করা মুশকিল। তবে সাধারণ ধারণা হলো, এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ বা প্রভাব সৃষ্টি করা হয়। ১৯৯৬ সালের ধসের পর কমিশনের চেয়ারম্যানের অব্যাহতির ঘটনা জানা গিয়েছিল। একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। তদন্তে চিহ্নিত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়া চালু হলেও আজ পর্যন্ত কারও শাস্তির ঘটনা দৃশ্যমান হয়নি।
২০১১ সালের শেয়ারবাজারে অস্বাভাবিক দরপতনের জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। পর্যায়ক্রমে তারা একাধিক সময় বিক্ষোভ প্রদর্শনসহ রাজপথে সংহিস ঘটনায় লিপ্ত হয়। তাদের অভিযোগ, মূষ্টিমেয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালিক অসৎ ও বেআইনী পন্থা অবলম্বন করে অচিরেই ধনী হওয়ার জন্য অবারিত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হচ্ছে। ঐ সময় মিডিয়ায় এ বিষয়টি বস্তনিষ্ঠভাবে প্রচারও করা হয়। শেয়ার বিশেষজ্ঞরাও এ বিষয়ে তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেন। কিছু নীতিনির্ধারক মত প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন যে, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে সব সময়ই লাভ করবেন আর ক্ষতি হলে বিক্ষোভ করবেন; এ প্রবণতা সঠিক নয়। কিছু সেমিনার বা আলোচনা সভায়ও বিজ্ঞ ব্যক্তিরা নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেন।
এমনই একটি সেমিনারে অধ্যাপক রেহমান সোবহান শেয়ারবাজারের চিত্র ক্যাসিনোর অনুরূপ বলে মত প্রকাশ করেন। কারণ শেয়ারবাজারের মূল উদ্দেশ্য প্রতিযোগিতামূলক বাজারভিত্তিক কাঠামো হিসাবে রূপান্তরিত হতে ব্যর্থ হয়েছে। ক্যাসিনো মূলত জুয়া খেলার আড্ডা। ধনী ব্যক্তিরাই এটা ব্যবহার করে থাকেন। হঠাৎ করে জুয়ায় জয়ী হওয়ার জন্যই তাঁরা এ কাজে লিপ্ত হন। উন্মুক্ত স্থানে জুয়া খেলা বেআইনী। ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রিত জায়গা। এখানে খেলা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসাবে গণ্য হয় না। অধ্যাপক সোবহানের মত গ্রহণ করলে বলা যায় যে, শেয়ারবাজারের খেলোয়াড়রা ধনী ব্যক্তি। গরিবদের এখানে কোন স্থান নেই। তবে গরিবরা হঠাৎ করে ধনী হতেও চায় না। এ প্রবণতা ধনীদের মধ্যেই বেশি।
২০১১ সালে শেয়ারবাজারে ধস নামার পর অতীতের ন্যায় একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ও অভিজ্ঞ ব্যক্তির সমন¦য়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন কয়েকদিন পূর্বে অর্থমন্ত্রীর কাছে পেশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনের পূর্ণাঙ্গ তথ্য এখনও অপ্রকাশিত। তবে ইতোমধ্যে এর প্রাসঙ্গিক কিছু তথ্য মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত তথ্যে যে বিষয়টি দৃশ্যমান তা হলো- অন্তত ৬০ ব্যক্তি অচিরেই ধনী থেকে আরও বড় ধনী হওয়ার জন্য দায়ী। তারা বেআইনীভাবে অধিকমাত্রায় লাভবান হওয়ার জন্যই এটা করেছে। অন্তত দু’জন ধনাট্য ব্যক্তির নাম এখন পর্যন্ত মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সাধারণ ও ইতোপূর্বে বিক্ষোভরত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। যে দু’জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে তা আগেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছিল বলে অনেকের ধারণা। তদন্ত কমিটি এ দু’জন সম্পর্কে সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। কেন? এ দু’জন কি ক্ষমতাসীন দলভুক্ত? ভবিষ্যতই বলে দেবে আসল সত্য কি? আবার অনেকে বলেছেন, এদের মধ্যে কিছু নাম একজন তরুণ বিরোধীদলীয় সাংসদ বহুদিন পূর্বে সংসদে তাঁর নাতিদীর্ঘ বক্তব্যে প্রকাশ করেছিলেন। তিনি উপযুক্ত প্রতিকারও দাবি করেছিলেন। তাঁর সে পরামর্শ ক্ষমতাসীন গ্রহণ করেনি। এ তরুণ সাংসদের কাছ থেকে তদন্ত কমিটি কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করেছে কিনা, জানা নেই। তবে এ কথা বলা যায় যে, সংশ্লিষ্ট সাংসদের জন্য তথ্য প্রদানে কোন বাধা ছিল না। এ সুযোগ তিনি গ্রহণ করেছিলেন কি-না তাও জানা নেই। অদৃশ্য কারণে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তিনি যদি এ সুযোগ গ্রহণ না করে থাকেন তাহলে কিছু বলার নেই।
রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে তদন্ত কমিটি প্রধান বলেছেন যে, যাঁরা শেয়ারবাজারে ধসের জন্য চিহ্নিত তাঁদের জন্য এ বিষয়টি মুখ্য নয়। কারন অন্যায়ভাবে অর্থ লাভের কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের পরিচয় একাকার হয়ে যায়। টেন্ডারবাজি প্রক্রিয়ায়ও এ সত্যটি প্রতিষ্ঠিত প্রাপ্তির সুযোগ যেখানে সেখানে রাজনৈতিক পরিচয় বিলীন হয়ে যায়। দলমত নির্বিশেষে তখন সবাই একযোগে কাজ করে। শেয়ারবাজার সংক্রান্ত চলমান বিতর্কের মুখ্য বিষয় হলোথ দায়ী ব্যক্তিদের নাম ও পরিচয় জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে কি হবে না। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর অবস্থান দৃঢ় ও স্পষ্ট। তাঁর মতে, আরও অন্তত দুই সপ্তাহের প্রয়োজন হবে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য। বিষয়টি নিয়ে তিনি বর্তমানে বহুল সমালোচিত ব্যক্তি। স্মরণ করা যেতে পারে যে, তদন্ত শুরু হওয়ার প্রাক্কালে তদন্ত কমিটিপ্রধান বলেছিলেন, অর্থমন্ত্রী চান প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হোক। এ বিষয়ে আরও বলা যায় যে, নাম বা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করার বিষয়ে তদন্ত কমিটি দ্বিধাগ্রস্ত ছিল না। ভবিষ্যতই বলে দেবে নাম প্রকাশ করা হবে কি-না। প্রাথমিকভাবে নাম প্রকাশ করার পক্ষে কমিটিপ্রধান মত প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি এ কথাও স্বীকার করেছেন যে, প্রতিবেদনটি ফুলপ্র“ফ নয়। অন্যদিকে নাম চিহ্নিত না করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে মর্মে অর্থমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিয়ে বিতর্কের ঝড় বর্তমানে দৃশ্যমান। তবে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, সবশেষে নাম জানা যাবে। মামলা রুজু হলেই নামগুলো নিশ্চিতভাবে জানা যাবে। তবে আদৌ মামলা হবে কি-না তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।
শেয়ারবাজারের ঘটনা প্রবাহে যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হলো প্রাথমিকভাবে ৬০ জনকে দায়ী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে (এক) আরও কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যাদের বিষয়ে অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন। (দুই) নাম বা পরিচয় তদন্ত কমিটি জানতে পারেনি অথচ তারা বিপুল অঙ্কের শেয়ার লেনদেন করেছে যার জন্য সরকারকে বিস্তারিত তদন্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে এবং (তিন) অনেক শেয়ার লেনদেন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান অনৈতিক ও বেআইনীভাবে বিপুলসংখ্যক হিসাব খুলেছে ও লেনদেন করেছে। যে কোন তদন্ত প্রতিবেদন পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার দায়িত্ব ও অধিকার সরকারের অবশ্যই কর্তব্য। অর্থ মন্ত্রণালয় সে কাজেই হাত দিয়েছে। এ নিয়ে অস্থির হওয়ার কিছু নেই। স্বচ্ছতা ও তৎপরতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার এখনই কয়েকটি পদক্ষেপ নির্দ্বিধায় করতে পারে। এক, তদন্ত কমিটির যে সমস্ত সুপারিশ অচিরেই গ্রহণযোগ্য তার বাস্তবায়ন করা, (দুই) যে সমস্ত বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে তা একই তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সম্পন্ন করা এবং (তিন) বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়ে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে সে বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থ গ্রহণ করা। বিকল্প হিসাবে একটি সরকারী তথ্য বিবরণী প্রকাশ করে সরকারের অবস্থান জনসমক্ষে প্রকাশ করা।
Powered by Blogger.