স্বামীকে খুশি করার কলাকৌশল সমূহ
প্রাচীনকালের কৃষ্টি ও সংস্কৃতিতে পুরুষকে খুশী এবং সুখী করার যে সব বিভিন্ন পদ্ধতি প্রচলিত ছিল—তাঁকে শিল্পকলা বলে বিবেচনা করা হত। প্রাচীন ভারতের যে সব জীবনযাত্রার সংবাদ চিত্র, ভাস্কর্য এবং ইতিহাসের মাধ্যমে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে, তাতে দেখা যায় প্রাচীন ভারতের নারীরা পুরুষকে খুশী এবং সুখী করার জন্য যেমন বিচিত্র প্রসাধনে তারা নিজেরা সজ্জিত হতেন, তেমনি সঙ্গীত, অভিনয়, রন্ধন, অক্ষক্রীড়া প্রভৃতিও অনুশীলন করতেন। জাপানের গেইসাদের শিশুকাল থেকেই নৃত্য, প্রেম নিবেদন এবং পুরুষদের আনন্দদানের জন্য মিষ্টালাপ করতে শেখানো হয়। ইউরোপে মিসট্রেসরা (শিক্ষয়িত্রী নয়) ট্রাডিশন অনুযায়ী এই সব বিশেষ বিদ্যায় অভ্যস্থ হয়।
আমার একার নয়, প্রায় সব বিবেচক মহিলারা নিশ্চিন্ত অভিজ্ঞতা যে, পুরুষকে সবচেয়ে বেশি খুশী করা যায় তাঁর পাকস্থলীর মাধ্যমে (The best way to win a man’s heart is through his stomach)। কবিগুরু বলেছেন, “রসের সেরা বাসা রসনায়”। সুখাদ্য রন্ধন এবং সুখাদ্য পরিবেশন করে মেয়েরা পুরুষদের প্রীতিভাজন হতে পারেন। যেসব স্ত্রী ভাল রান্না করতে পারেন, তাদের স্বামীরা সেইসব স্ত্রীর জন্য গর্ব অনুভব করেন। আজকালকার আধুনিক অনেক মেয়ে ভাল রান্না করতে জানেন না। কারণ, পড়াশুনা বা অন্য বৃত্তিতে কৈশোর ও যৌবনকাল ব্যাপৃত থাকায় সেই বিশেষ শিল্পটি তারা আয়ত্ব করার সুযোগ পান না। তারপরে বয়সকালে বিয়ে হওয়ার স্বামীর ঘরে গিয়ে রান্নার কথা মনে হওয়ার তখন রান্নাশেখার বই কিনতে হয়। নতুন করে রান্নার তালিম নিতে হয়।
হলিউডের একজন সুন্দরী চিত্রতারাকাকে একবার প্রশ্ন করেছিলাম—মেয়েরা তাদের স্বাধীনতা বজায় রেখে পুরুষকে খুশী করার জন্য কতটুকু করতে পারে? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “আমি বলবো, নারী পুরুষকে তাঁর প্রয়োজনীয় সব কিছু গুছিয়ে দেবে।
টেবিলে যা খাদ্য সে পরিবেশন করবে, যে পোশাক সে পরবে, তা যেন ঐ পুরুষের জন্য, পুরুষের প্রশংসা আকর্ষণের দিকে রেকেহ হওয়া উচিৎ।”
মেয়েরা যদি সমকক্ষ হয়ে চলে, অথবা যদি পুরুষের অধীন না হয়—তাহলে কি পুরুষ খুশী হয়?—এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ইউরোপের জনৈকা মহিলা। তিনি বলেছেন, যেসব মেয়ে পুরুষের কর্তৃত্বাধীন থাকবে না বলে মুখে বড়াই করে, তারা আসলে পুরুষের অধীনতাই বেশি পছন্দ করে। তারা চায় যে পুরুষ তাদের উপরে কর্তৃত্ব করুক। আর মেয়েদের প্রকৃত স্বভাবই হল পুরুষের আশ্রয়ে, পুরুষের প্রেমে লালিত হওয়া। কি অবিবাহিতা বা কি বিবাহিতা সমস্ত নারীই পুরুষের আশ্রয়ে থেকে সুখী হতে চায়। একটা কথা কখনই ভুললে চলে না, মেয়েরা যদি পুরুষের মধ্যে সুপারম্যান খুঁজতে চায়, তবে পুরুষই বা কেন নারীর মধ্যে তাঁর আকাঙ্খিক্ষত সব কিছু পেতে চাইবে না।
কিভাবে পুরুষকে খুশী করবে নারী? প্রশ্নটি সত্যিই শক্ত। মানুষকে খুশী করা আরও শক্ত। আমার বিশ্বাস, মনে প্রাণে চেষ্টা করলে অনেক শক্ত কাজও সহজে করা যায়। আমার ধারণা, মেয়েরা যদি সত্যিই পুরুষকে খুশী করতে চায়, তাহলে তাঁর প্রথম কাজ হবে পুরুষের সকল ইন্দ্রিয়ের কাছে আবেদন পৌঁছে দেওয়া। প্রথমে চোখের কথা ধরা যাক। পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের মধ্যে চোখ হল প্রথম। মেয়েরা তাদের উপস্থিতি দিয়ে পুরুষের দৃষ্টিকে খুশী করতে পারে। দৈহিক পরিচ্ছন্নতা, প্রসাধনের বিলাস এবং পোশাক পরিচ্ছদের সঠিক ব্যবহার একজন একজন নারী দৈহিক পরিবেশকে মিষ্ট এবং কাম্য করে তোলে। কোন পুরুষ হয়ত স্ত্রীকে বিশেষ ধরণের শাড়ি পরা দেখলে খুব খুশী হয়, তাহলে স্ত্রী কি সব সময় বিকিনি পোশাক পরে থাকবে?—না। সব সময় বিকিনি পরতে হবে কেন? স্বামী যদি স্ত্রীকে বিকিনি পোশাকে দেখে খুশী হয়, তবে স্বামীকে যখন রাত্রির খাবার পরিবেশন করবেন—তখন বিকিনি পরুন।
অনেক স্বামী স্ত্রীর দৈহিক যৌন – আকর্ষণী রূপ দেখলে খুশী হয়। এর জন্য মেয়েরা কি কৃত্রিমভাবে সুন্দরী হবে নাকী?
–নিশ্চয় না। কোন পুরুষকে আকর্ষণ করার জন্য হয়ত কোন মেয়েকে কৃত্রিম মেকাপ নিতে হতে পারে বা ফলস ব্যবহার করতে হতে পারে, কিন্তু পুরুষকে জয় করার পর পুরুষই তো তাঁর সব খবর জেনে নেয়। কৃত্রিমতার কি দরকার আছে? গ্রেস কেলি বা আদ্রেঁ হেপবার্ন নিশ্চয়ই যৌন আকর্ষণ দেহের অধিকারিণী নন, কিন্তু তারা কেউ কম যৌন আকর্ষণ সৃষ্টিকারিণী নন। মেয়েদের দেহে কৃত্রিম প্রসাধন বা সাজগোজ করলে যৌন আকর্ষক হওয়া যায় না। যৌন আকর্ষণ জাগে চিন্তায়—নারীর অন্তরলোকে।
মেয়েরা যদি সব সময় সেন্ট মেখে থাকে, তবে কি পুরুষরা খুব খুশী হয়? মিষ্টিগন্ধ নিশ্চয়ই মানুষকে খুশি করে। সুগন্ধি প্রসাধন মেয়েদের অবশ্যই প্রয়োজন। তবে এর সঙ্গে পরিবেশটাও সুরভিত হওয়া দরকার। সুগন্ধি দ্রব্য পুরুষকে খুশী করে বলে যে ব্যবহার করতে হবে, শুধু তাই নয়, অধিকন্ত প্রসাধন এবং সুগন্ধি দ্রব্যের ব্যবহারে নারীর প্রতি পুরুষের মনোযোগ আরও তীব্রতা লাভ করে।
স্ত্রীরা যদি নানাভাবে স্বামীর কামাবেগ জাগ্রত করে তাহলে কি স্বামীরা খুশী হয়?
আমি বলবো শতকরা ৯৯ জন সুস্থ স্বামীই স্ত্রীর ব্যবহারে কামাবেগ উত্তেজিত হতে পারলে খুশী হয়—কিন্তু কামোত্তেজনা যেন ইন্সট্যান্ট কফি, ইন্সট্যান্ট স্যুপ ইত্যাদির মতো ইন্সট্যান্ট সেক্স না হয়। যৌন জীবনের উত্তেজনার মধ্যে থাকবে রোমান্স, থাকবে পুরুষের আন্তরিক কামনা এবং লাভ করার জন্য সাধনা। যে নারীকে যত সহজে পুরুষ লাভ করে জয় করতে পারে— তত দ্রুত তাঁকে ফেলে দেয়, ত্যাগ না করলেও মূল্য দেয় না। অতএব নারী মাত্রেরই উচিত নিজের মর্যাদা এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে দৃঢ় রাখা। যৌন জীবন যাপন করা অন্যায় নয় কিন্তু যৌন জীবনকে রুচিসম্মত এবং প্রয়োজন মতো করা নিশ্চয়ই দরকার। যৌন জীবনকে এমন ভাবে সাজিয়ে নিতে হবে—তা যেন স্বামী ও স্ত্রী— দুজনের কাছেই আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
যদি কোন স্ত্রী পোশাকে প্রসাধনে নিজেকে উত্তেজনার উপাদান করে তোলেন, তাহলে সে কি ইন্সট্যান্ট সেক্সে পরিণত হচ্ছে না? না। নিজেকে পোষাকে প্রসাধনে সজ্জিত করলেই ইন্সট্যান্ট সেক্স হবে কেন? পোশাক এবং প্রসাধন পুরুষের মনে রোমান্সের মায়া লাগিয়ে পূর্ণিমা রাতের জোছনার মতো দূর থেকে হাতছানি দেবে। পুরুষ এই আহ্বান কিছুটা বুঝবে কিছুটা না, কিন্তু ওগুতে থাকবে—আর এতেই স্ত্রীর প্রতি স্বামীর আকর্ষণ বৃদ্ধি পাবে।
পোশাকে এবং প্রসাধনে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার শেষ অবস্থা কি স্ট্রিপটিজের মতো বিবসনার পর্যায়ে আসবে না?—এই অবস্থাকে ঐ বিশেষ শব্দে ঠিক বোঝানো যায় কি না বলতে পারি না—তবে স্বামীকে সুখী কররা প্রশ্ন যদি সত্যিই মেয়েরা ভাবেন, তাহলে এই অবস্থা কোন প্রকার অসম্মানজনক মনে হবে না। ঘরের স্ত্রী কাছে পুরুষ যা অয়ায় না তাঁর স্বাদ পেতে তারা টাকা খরচ করে ছোটে হোটেলে, ক্যাবারে নাচের আসরে বা অন্যত্র। ঘরে যদি পুরুষ তাঁর স্ত্রীর কাছে এই আকাঙ্খার নিবৃত্তি করতে পারে তাহলে বিকৃত পথে তাঁকে ছুটতে হবে না। স্ত্রী অত্যন্ত শালীনভাবে স্বামীর কাছে বিবসনা হতে পারেন, আর এর থেকে যে উত্তেজনা পুরুষ ঘরে পাবে, তাতে তাঁর বাইরের দিকে মন যাবে না।
মেয়েরা বিবস্ত্রা হওয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত লাজুক। তারা পুরুষের সামনে কোন অঙ্গবাস পর্যন্ত পরিবর্তন করতে চান না, যদিও নাইট ক্লাবের রঙ্গিনীরা অসংখ্য পুরুষের সামনে বিবস্ত্রা হন। প্রকাশ্যে অন্যের সামনে যা করা যায় না—স্বামীর কাছে নিভৃতে নিশ্চয়ই সেই আচরণ করা যায়। যৌন জীবন হাস্যকর নয়—বরং গুরুত্বপূর্ণ হলে উত্তেজক হয়। এতে সবচেয়ে বেশি লাভ হয় স্ত্রীদের, কারণ বিয়ের পনেরো বছর পরে পুরুষ যখন স্ত্রীর প্রতি আগ্রহহীন হয়ে পড়ে, তখন স্ত্রী যদি স্বামীকে প্রলুদ্ধ করতে পারেন, তবে স্বামী চিরদিন তাঁর কেন্দ্রে বন্দী থাকবেন, অন্য নারীর প্রতি কোন আকর্ষণই বোধ করবেন না।
পুরুষ কি বৈচিত্র্য পছন্দ করে?—- নিশ্চয়ই, পুরুষ মাত্রই বৈচিত্র্য পিপাসু। শুধু স্বামী স্ত্রীর মধ্যে নয়, স্ত্রীও স্বামীর মধ্যে নিত্য নব বৈচিত্র্য খুঁজতে চেষ্টা করে। নারী এমনভাবে নিজেকে স্বামীর স্বামীর সংসারে, সমাজে, সন্তানদের মধ্যে ব্যাপ্ত করে রাখবেন, যেন চোখের আড়াল হলে স্বামী ভাবেন, আমার স্ত্রীই সবচেয়ে ভাল, কারণ সে আমাকে সবচেয়ে বেশী বোঝে,আমার ছেলেমেয়েদের সবচেয়ে বেশী ভাল পদ্ধতিতে মানুষ করতে পারে; সংসারের ব্যাপারেও বেশি বোঝে, আর আমি কিসে আনন্দ পাই, তাও ভাল জানে।
স্বামী নিজের স্ত্রীর মধ্যে এই বৈচিত্র্য দেখতে পেলে খুশী হয়। স্ত্রীর চুল বাঁধা , শাড়িপরা, ঘর সাজানো, রান্না করা যদি বৈচিত্র্যময় হয়, তাহলে স্বামীমাত্রেই সুখী হয়। অবশ্য এই বৈচিত্র্য মানে উদ্ভট কিছু কাজ নয়। স্ত্রী সব সময় স্বামীর জন্য ইজের দৈহিক সৌন্দর্য এবং পরিবেশের বজায় রাখবেন।
একজন গৃহবধূ এইসব ব্যাপারে হয়ত একজন সুন্দরী এবং যৌন আকর্ষণ সম্পন্ন অভিনেত্রীর মতোন সমান পারদর্শী হতে পারেন না, কিন্তু স্বামীর চিন্তাধারা এবং কামনা বাসনার সঙ্গে তাল রেখে চলতে পারেন। যে স্ত্রী স্বামীর বুদ্ধিবৃত্তি মননশীলতার অংশীদার হতে পারে সে তো তাহলে পিছিয়ে পড়ে।
স্ত্রীর কাছে স্বামি সবচেয়ে বেশী যা আশা করে এবং যা পেলে সবচেয়ে বেশী খুশী হয় –তা কিন্তু সেক্স নয়, তা হল শান্তি। এই শান্তি জিনিসটা বড় ব্যাপক। পুরুষ তাঁর মনের শান্তি পেতে চায় স্ত্রীর কাছে, স্ত্রীর দৈনন্দিত আচার ব্যবহারে, গৃহসজ্জায় এবং খাদ্য সরবরাহে, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ব্যাপারে, ছেলেমেয়েদের এবং পারিবারিক ব্যাপারে। স্ত্রী স্বামীকে দেবে সাহস, উৎসাহ এবং দুর্লভ প্রিয়সঙ্গ। দিনের ক্লান্তি এবং পরাজয় অথবা পরিশ্রমের পরে পুরুষ ঘরে এসে শান্ত হতে চাইবে, বিশ্রাম চাইবে। স্ত্রীর ব্যবহার, দায়িত্বজ্ঞান এবং সংসারের প্রতি গভীর দরদ স্বামীকে দেবে সেই মানসিক বিশ্রাম। স্বামীকে প্রকৃত অর্থে সুখী করতে হলে প্রত্যেক স্ত্রী চেষ্টা করবেন মানিয়ে চলতে, সামঞ্জস্য পূর্ণ দাম্পত্য জীবন গড়ে তুলতে। বিরোধ এবং প্রতিযোগিতা বা সমালনার মধ্য দিয়ে কাউকে সুখী করা যায় না। বন্ধুত্ব সামঞ্জস্যবোধ এবং প্রেমের দ্বারাই স্ত্রী স্বামীকে সবচেয়ে বেশী খুশী রাখতে পারেন, সুখী করতে পারেন।