ধনী হতে ৫টি মৌলিক পরামর্শ
সবাই ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু সফল হন অল্প সংখ্যক মানুষ। বিশেষ করে যারা নিজের চেষ্টায় ছোট থেকে বড় হয়েছেন তারাই সত্যিকারের সফলতম মানুষ। আবার ভিন্ন অর্থে ধনীরাও গরীব এবং গরীবরাও ধনী হতে পারে। যেমন- তৃতীয় বিশ্বের কোনো দেশে একটি পরিবারের ৫ জন সদস্য তাদের খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়াটাই তাদের ধনী বানিয়ে দেয়। আবার একটি আলিশান বাড়িতে ৫ সদস্য বাস করেন এবং বিলাসিতা তাদের মনঃপুত না হলেও তারা গরীবই থেকে যান।
কাই সত্যিকার ধনী হওয়া অর্থ হলো, অর্থ-বিত্ত এবং মানসিকতার পুরোটাই ধারণ করা। কেবল অর্থ থাকলেই ধনী হওয়া যায় না। মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার সুখ যদি জীবনে বিরাজ না করে, তবে সেই ধনের মূল্য কোথায়? তাই জীবনে প্রকৃতপক্ষে ধনী হতে বিশেষজ্ঞরা দিয়েছেন ৫টি পরামর্শ। এসব পরামর্শ সেই সকল মানুষরা দিয়েছেন যারা স্বীয় প্রচেষ্টায় প্রকৃত ধনী হয়েছেন।
১. উৎপাদকের হয়ে উঠুন : ভোক্তা থেকে উৎপাদক হয়ে উঠতে হবে। যেমন- ভোক্ত পিৎজা খান। আর উৎপাদক পিৎজা তৈরি করেন। অর্থাৎ, উৎপাদক নিজে খাওয়ার জন্যে এ কাজ করেন না। তিনি মানুষকে খাওয়াতে চান। তাই বলে তাকে বেঁচে থাকার জন্যে যে ভোগের বিষয়টি রয়েছে, তা বন্ধ করতে বলা হচ্ছে না। তবে যারা উৎপাদকের মানসিকতা ধারণ করেন, তারা পরবর্তিতে নিজের খাওয়ার পরিবর্তে অন্যকে কি দেবেন তা নিয়েই বেশি ভাবেন। এটা শুধু খাওয়ার ক্ষেত্রেই নয়। খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বেস্ট সেলার বইয়ের লেখক যিনি, তারা সবাই জানেন কিভাবে মানুষের জন্যে পণ্য বানাতে হয়। যখন এমন একটি পণ্যের জোগান আপনি দিতে পারবেন তখন বাহ্যিক এবং মানসিকভাবে আপনি ধনী হয়ে উঠবেন।
২. নিজের প্রতিদিনের মূল্য জানান : আপনার একটা মূল্য রয়েছে। কাজেই প্রতিদিনের একটা মূল্য আপনার ক্ষেত্রে বেরিয়ে আসে। এটা কত হতে পারে? কাজের ভিত্তিতে এটা বের করতে পারেন। বছরে কর্ম ঘণ্টা হিসাবে করে আপনি প্রতিদিন কত কামাচ্ছেন তা বের করুন। যদি মিলিয়নিয়ার হতে চান তবে প্রতিদিন আপনাকে ৪ হাজার ডলার কামাতে হবে, জানান নিজের চেষ্টায় প্রকৃত ধনী হয়ে ওঠা ডেনিয়েল অ্যালাই। প্রতিদিনের উপার্জনই আপনার প্রতিদিনের মূল্য। যদি আপনার মূল্য কম থাকে, তবে একে বাড়াতে অন্য উপায় গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে যা করছেন তাকেই কয়েক গুন বাড়ানোর চেষ্টা করুন। যদি আপনার চাইল্ড কেয়ারে ১০ জন শিশুকে দেখভালের ব্যবস্থা থাকে তবে একে ৩০ জনে উন্নীত করুন।
৩. সবকিছু ত্যাগ করুন : অধিকাংশ মানুষই কিছু ত্যাগ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কারণ, মনে ভয় থাকে কিছু হারিয়ে গেলো বুঝি। যেমন- কোনো মা শিশুকে কিছু পয়সা খরচ করে এমন একটি বই কিনে দিতে চান না যা ভবিষ্যতে কয়েক শো গুন সম্পদ এতে দেবে। কিন্তু আরো বেশি পয়সা খরচ করে শিশুকে খুশি দেখতে ভিডিও গেম কিনে দেন অনায়াসে। ধনী হওয়ারর আগে আপনাকে মূলত দরিদ্র হতে হবে। এমনকি লটারি বা উত্তরাধীকারসূত্রে সম্পদ বা অর্থের মালিক হলেও সব ত্যাগের মানসিকতা থাকতে হবে। নয়তো এগুলো খোয়া যাক বা না যাক, মনের শান্তি নষ্ট হবে। অর্থ থাকা সত্ত্বেও খারাপ কিছু মেনে নিতে মানসিক প্রস্তুতি থাকা চাই। আবার যা অর্জন করছেন তা ধীরে ধীরে আসলে বিষয়টি চরম তৃপ্তিকর হবে। তাই কিছু করার আগে দুটো প্রশ্ন নিজেকেই করুন। এক, সবচেয়ে খারাপ কোন ঘটনা ঘটে যেতে পারে, যদি এ কাজ করা হয়? দুই, সবচেয়ে ভালো কি ঘটতে পারে?
৪. ধনীদের মাঝেই থাকুন : আপনি ধনী। তাই আপনার চলাফেরা এবং জীবনের অন্যান্য কার্যক্রম ধনীদের মাঝেই হওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ধনী হয়েও দরিদ্র মানুষের মাঝে এবং তেমন স্থানে বাস করেন, তবে নিজেকে ধনী বলে মনে হবে না। সেই অবস্থানে থেকে আপনি কখনো ধনী হতেও পারবেন না। তা ছাড়া নেতিবাচক মানসিকতার মানুষের মাঝে থাকলেও ভালো কিছু হবে না। বহু মানুষ নেতিবাচক পরিস্থিতিতে পড়লে গসিপ, নাটকীয়তা এবং হিংস্রতার আশ্রয় নেন। যদি মানসিকভাবে ধনী হতে না পারেন, তবে সম্পদ থাকা সত্ত্বেও আপনি দরিদ্রই থেকে যাবেন।
৫. গুণের ব্যবহার ঘটান : প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু গুণ রয়েছে। আপনার মধ্যে কি কি গুণ লুকিয়ে রয়েছে তা খুঁজে বের করুন। কোনো না কোনো খাতে এদের দারুণ ব্যবহার রয়েছে। আশপাশের মানুষের মধ্যে তা ছড়িয়ে দিন। নিজের যোগ্যতা, মেধা, গুণ, ক্ষমতা ইত্যাদি খুঁজে বের করা সব সময় সহজ নয়। স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে এগুলোর দেখা পাবেন। এসব প্রতিষ্ঠান মানুষের গুণ ব্যবহারে উৎসাহ দেয়। জীবনের একটা পর্যায়ে গিয়ে কি গুণের ব্যবহার করলেন তা হিসাব করতে হবে। এসব গুণের ব্যবহার ঘটলে অর্থ আপনার কাছেই আসতে থাকবে। আপনি কি তার পরিচয় তুলে ধরবে অর্থ-বিত্ত। আর মানসিক শান্তি আপনাকে সত্যিকার ধনী করে তুলবে। ধনী হতে তাই নানা গুণের সমন্বয় ঘটতে হয়। আর অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানসহ অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে অর্থের ব্যবহার করুন। মানসিক শান্তি অর্জনে সচেষ্ট থাকুন। যদি হতে চান সত্যিকারের ধনী।