যাদু মন্ত্র - কোকা পন্ডিত

Header Ads

যাদু মন্ত্র




রহস্যময় যাদু-মন্ত্র আর ঘন অরণ্যের দেশ কামরূপ কামাখ্যা! কোন পুরুষ সেখানে একবার গেলে তার ফিরে আসা কঠিন। যৌবনবতী নারীদের রাজত্ব চলে এখানে। পুরুষদের যাদু করে ক্রিতদাস করে রাখে এই যৌবনবতীরাই।


এ ছাড়াও সেখানে আছে বিশাল সিংহ যার ডাকে ফেটে চৌচির হয়ে যায় পুরুষের অন্ডকোষ। দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে সেখানে যেতে হয়। যে ফিরে আসতে পারে সে হয় যাদুকর। অনেক অসাধ্যকেই সে করতে পারে সাধন।

কামরূপ কামাখ্যা সম্পর্কে এমন অনেক তথ্যই হয়তো আপনি শুনেছেন রাস্তার পাশে কোন ক্যানভাসারের মুখ থেকে। আপনি হয়তো কখনো প্রচন্ড ভীত হয়েছেন। আবার কখনো প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে বিরামহীন শুনে গেছেন সেসব কাহিনী। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায়ও স্থান করে নিয়েছে এই রহস্যময় যাদু টোনার জগৎ। সবচেয়ে কাছের বন্ধুটিকে নিয়ে সেখানে যাওয়ার দু:সাহসী মনোবাঞ্চাও আপনি করেছেন বেশ কয়েকবার।

সময়ের ব্যাবধানে আপনি হয়তো ভূলে গেছেন বন্ধুকে দেয়া এমন দূ:সাহসিক অভিযাত্রার কথা। তবে নিশ্চয়ই এ দেশ সম্পর্কে আপনি অনেক কিছু শুনলেও জানার আগ্রহ আছে আরো অনেক। বিডিটাইমস আপনাকে জানাচ্ছে সেসব কথা-

আসামের কামরুপ জেলার নীলকন্ঠ পাহাড়ের চূড়ায় এক প্রাচীন মন্দিরের সন্ধান মেলে। এই প্রাচীন মন্দিরটিই কামাক্ষা দেবীর মন্দির নামে পরিচিত। আসামের গুয়াহাটি স্টেশন থেকে পাহাড়ি এক রাস্তা ধরে যেতে হয় সেখানে।



কামরূপ কামাখ্যার আশপাশের অরণ্য আর নির্জন পথে নাকি ঘুরে বেড়ায় ভালো-মন্দ আত্মারা। সেখানেই লুকানো তাবৎ রহস্য, রোমাঞ্চ আর গল্পগাথা।

হিন্দু দেবী কামাখ্যার মন্দিরটি ৫১ সতীপীঠের অন্যতম। এই মন্দির চত্বরে দশমহাবিদ্যার মন্দিরও আছে। এই মন্দিরগুলিতে দশমহাবিদ্যা অর্থাৎ ভুবনেশ্বরী, বগলামুখী, বগলামুখী, ছিন্নমস্তা, ত্রিপুরাসুন্দরী, তারা, কালী, ভৈরবী, ধূমাবতী, মাতঙ্গী ও কমলা– এই দশ দেবীর মন্দিরও রয়েছে।

এর মধ্যে ত্রিপুরাসুন্দরী, মাতঙ্গী ও কমলা প্রধান মন্দিরে পূজিত হন। অন্যান্য দেবীদের জন্য পৃথক মন্দির আছে। হিন্দুদের, বিশেষত তন্ত্রসাধকদের কাছে এই মন্দির একটি পবিত্র তীর্থ।

কামাখ্যা মন্দিরে চারটি কক্ষ আছে- গর্ভগৃহ ও তিনটি মণ্ডপ। গর্ভগৃহটি আসলে ভূগর্ভস্থ একটি গুহা। এটি ছোট ও অন্ধকারাচ্ছন্ন। সরু খাড়াই সিঁড়ি পেরিয়ে এখানে পৌঁছাতে হয়। ভিতরে ঢালু পাথরের একটি খণ্ড আছে যেটি যোনির আকৃতিবিশিষ্ট। এটিতে প্রায় দশ ইঞ্চি গভীর একটি গর্ত দেখা যায়। একটি ভূগর্ভস্থ প্রস্রবনের জল বেরিয়ে এই গর্তটি সবসময় ভর্তি রাখে। এই গর্তটিই দেবী কামাখ্যা নামে পূজিত এবং দেবীর পীঠ হিসেবে প্রসিদ্ধ।

কামাখ্যা মন্দির চত্বরের অন্যান্য মন্দিরগুলিতেই একই রকম যোনি-আকৃতিবিশিষ্ট পাথর দেখা যায়, যা ভূগর্ভস্থ প্রস্রবনের জল দ্বারা পূর্ণ থাকে।

প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে অম্বুবাচী মেলার সময় কামাখ্যা দেবীর ঋতুমতী হওয়ার ঘটনাকে উদযাপন করা হয়। এই সময় মূল গর্ভগৃহের প্রস্রবনের জল আয়রন অক্সাইডের প্রভাবে লাল হয়ে থাকে। ফলে এটিকে ঋতুস্রাবের মতো দেখতে হয়।

ইতিহাস:

প্রাচীন কামরূপ রাজ্যের বর্মণ রাজবংশের শাসনকালে (৩৫০-৬৫০ খ্রিস্টাব্দ) এবং সপ্তম শতাব্দীর চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং-এর রচনাতেও কামাখ্যা উপেক্ষিত হয়েছে। সেই সময় কামাখ্যাকে অব্রাহ্মণ কিরাত জাতীয় উপাস্য দেবী মনে করা হত। নবম শতাব্দীতে ম্লেচ্ছ রাজবংশের বানমলবর্মদেবের তেজপুর লিপিতে প্রথম কামাখ্যার শিলালিপি-উল্লেখ পাওয়া যায়। এই শিলালিপি থেকে প্রমাণিত হয় খ্রিস্টীয় অষ্টম-নবম শতাব্দীতে এখানে একটি বিশাল মন্দির ছিল।

জনশ্রুতি অনুসারে, সুলেমান কিরানির (১৫৬৬-১৫৭২) সেনাপতি কালাপাহাড় এই মন্দির ধ্বংস করেছিলেন। তবে ঐতিহাসিক প্রমাণ থেকে জানা যায় যে, আলাউদ্দিন হুসেন শাহ কামতা রাজ্য আক্রামণ করার সময় (১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দ) এই মন্দির ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল।

কথিত আছে, কোচ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বসিংহ এই ধ্বংসাবশেষ খুজে পান। তিনিই এই মন্দিরে পূজার পুনর্প্রবর্তন করেন। তবে তার পুত্র নরনারায়ণের রাজত্বকালে ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দিরটি নির্মাণের কাজ শেষ হয়। পুনর্নির্মাণের সময় পুরনো মন্দিরের উপাদান ব্যবহৃত হয়েছিল। পরে অহোম রাজ্যের রাজারা এই মন্দিরটি আরও বড়ো করে তোলেন। অন্যান্য মন্দিরগুলি পরে নির্মিত হয়।
Powered by Blogger.