স্ত্রীর প্রতি মনোরঞ্জন করা স্বামীর কর্তব্য
শুধু ভাত-কাপড়ই স্ত্রীর হক নয়। বরং স্ত্রীর মনোরঞ্জন করা, তার প্রতি উদারতা প্রদর্শন ও সদাচরণ করাও তার একটি হক।
হাদীস শরীফে আছেঃ
“স্ত্রীদের সাথে সদাচরণ করো। কেননা তাঁরা তোমাদের নিকট কয়েদীর মত।”
“স্ত্রীদের সাথে সদাচরণ করো। কেননা তাঁরা তোমাদের নিকট কয়েদীর মত।”
আর যে ব্যক্তি কারো হাতে বন্দী এবং সম্পূর্ণরূপে তার নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে, তার উপর দমন-পীড়ন চালানো বীরত্বের কাজ নয়।
মনোরঞ্জন করার অর্থ হলো, স্ত্রীর প্রতি এমন কোন আচরণ না করা, যা দ্বারা তার অন্তর আঘাত পায়। ভরণ-পোষণ ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা তো স্ত্রীর এমন সুনির্দিষ্ট হক, যা সম্পর্কে সকলে অবগত। কিন্তু স্ত্রীর মনোরঞ্জন করা এবং তার মন যুগিয়ে চলা এমন একটি ব্যাপক কাজ, যার কোন সীমা পরিসীমা নেই। এজন্য স্ত্রীর অন্তরে আঘাতদানকারী প্রতিটি কথা ও কাজ থেকেই নিজেকে নিবৃত্ত রাখা জরুরী। স্ত্রীর হক বা অধিকার অগণিত। তা সুনির্দিষ্ট করে দেয়া সম্ভব নয়। অতএব, স্ত্রীর সাথে প্রতিটি আচরণ ও উচ্চারণ অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
স্ত্রীকে ভাত-কাপড় দেয়াই শুধু তার হক নয়। বরং তার মনোরঞ্জনে সচেষ্ট থাকাও আবশ্যক। ফিকাহবিদগণ স্ত্রীর মনোরঞ্জনের প্রতি এতটুকু গুরুত্ব আরোপ করেছেন যে, তাঁকে খুশী করার জন্য তার সাথে মিথ্যা বলাকেও তাঁরা জায়েয মনে করেন। এর দ্বারা স্ত্রীর হকের গুরুত্ব সুস্পষ্ট হয়ে যায়। কেননা মহান আল্লাহ স্ত্রীর মনোরঞ্জনের জন্য তার নিজের হক পর্যন্ত মাফ করে দিয়েছেন।
স্ত্রীর মনোরঞ্জন করলে এবং তার মন যুগিয়ে চললে তার মধ্যে কখনও এ জাতীয় চিন্তা আসবে না যে, “আমিও যদি পর্দা না করতাম, তাহলে অন্যান্য বে-পর্দা মহিলাদের ন্যায় আমারও সব কিছু সহজে পূরণ হয়ে যেতো।” এজন্য সুন্দর আখলাক ও মহৎ আচরণের মাধ্যমে স্ত্রীর মনোরঞ্জন করে চলা উচিত। যেন তার এ বিশ্বাস হয়ে যায় যে, সে পর্দা রক্ষা করে না চললে স্বামী তার প্রতি এরূপ আচরণ করতো না। মোটকথা, স্বামীর সদাচরণ ও ভালো ব্যবহার দ্বারা স্ত্রী পর্দার কল্যাণ উপলব্ধি করতে পারবে এবং পর্দাহীনতাকে মনে পোষণ করার মনোভাব তার অন্তর থেকে দূর হয়ে যাবে।
স্ত্রীকে পর্দাদ মধ্য অবশ্যই রাখতে হবে। কিন্তু তার পালনে সহায়ক ব্যবস্থাও উবশ্যই থাকা চাই। এমন হওয়া উচিত নয় যে, স্বামী নামাজে যাওয়ার সময় স্ত্রীকে কামরায় রেখে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে যাবে, তার সাথে কাউকে কথা-বার্তা ও উঠা-বসার সুযোগ দিবে না এবং তার চলাফেরার উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে। স্ত্রীকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পর্দা পালনে উৎসাহী হওয়ার মত উপায়-উপকরণের ব্যবস্থা করে দেয়া আবশ্যক। (তবে অবশ্যই তা শরীয়ত সম্মত হতে হবে) যেন গৃহের বাইরে যাওয়ার কল্পনাই তার অন্তরে না আসে। পুরুষরা কখনও মানসিক অস্বস্তি বোধ করলে বাইরে গিয়ে বন্ধু-বান্ধবের সাথে সময় কাটিয়ে মানসিক স্বস্তি নিয়ে আসে। কিন্তু অসহায় মহিলারা যাবে কোথায়? পর্দা রক্ষা করতে গিয়ে তাদেরকে স্বগৃহেই নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে হয়।
এজন্য হয়ত নিজে তাঁকে সঙ্গ দিবে। নিজের পক্ষে নিয়মিত সঙ্গ দেয়া সম্ভব না হলে কোন সমবয়সী মহিলাকে তার সাথে থাকার ব্যবস্থা করে দিবে। যদি কখনও কোন বিষয়ে তোমার কাছে অভিযোগ-আপত্তিও করে, তবে এটাকে নগন্য বিষয় মনে করে উদারতার দৃষ্টিতে দেখবে। স্বামী ছাড়া তার আর কে আছে? স্বামী ছাড়া তার আর কে আছে? স্বামীই তো তার একমাত্র অবলম্বন। স্বামী ছাড়া আর কার কাছে সে অভিযোগ ও সমস্যার কথা বলবে। তার পক্ষ হতে কোন অভিযোগ বা দাবী এলে সেটাকে মান-অভিমান ও মহব্বত-ভালোবাসার দাবী মনে করবে। আল্লাহর মেহেরবানী যে, আমাদের দেশের মহিলাদের মধ্যে স্বামী ভক্তি ও স্বামীর প্রতি মহব্বত-ভালোবাসা অত্যন্ত বেশী। একে ইশক এর পর্যায়ভুক্ত বলা যায়।